কুষ্টিয়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জনপ্রিয় জুটি আমিরুল ইসলাম ও দিনু
এসএম জামাল: স্টার, অভিনেতা-অভিনেত্রী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং পারিবারিক জীবনে সফল ও আদর্শ জুটি। আমিরুল ইসলাম মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্র অভিনেতা,সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক।
কুষ্টিয়ার কৃতি সংগঠক ও অভিনেতা আমিরুল ইসলামের জন্ম: ২৩ ডিসেম্বর, ১৯৫৪ খ্রি:। তিনি ১৯৬৪ সালে মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণীর ছাত্র বার্ষিক অনুষ্ঠানে পাঠ্য পুস্তকের গল্প ঈমান ও কাজীর বিচার নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে নাট্যজীবন শুরু করেন। সেই দিনের সেই ছাত্রটিই বর্তমানে কুষ্টিয়া সাংস্কৃতিক অঙ্গণের সর্বজন স্বীকৃত সাংস্কৃতিক নেতা তথা জেলা শিল্পকলা একাডেমি, কুষ্টিয়ার নয় নয় বার(২৭ বৎসর) নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। আজ তাঁর নাট্য কর্মকা- জেলার সীমানা ছাড়িয়ে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তৃত। ১৯৬৮ সালে গঙ্গা কপোতাক্ষ নাঠ্যগোষ্ঠী, কুষ্টিয়া প্রতিষ্ঠা করে তিনি নাট্যজীবনে নিয়মিত নাটক ও অভিনয় শুরু করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের পর বাংলাদেশে প্রথম ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসের শেষে দুইটি নাটক মঞ্চস্থ করেন। ১৯৭৩ সালে ইসলামীয়া কলেজ সংসদে নির্বাচিত সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসাবে নাটক মঞ্চস্থ করেন। ১৯৭৪-৭৭ সাল পর্যন্ত ঢাকায় রঙ্গনা নাট্যগোষ্ঠীর সাথে জড়িত থেকে নিয়মিত মঞ্চে অভিনয় করেছেন। ১৯৭৭ সালে কুষ্টিয়ায় ফিরে আসেন। ১৯৭৮ সালে ৫০ মিনিট সময় ব্যাপী মঞ্চায়িত “কিংশুক যে মরুতে” নাটকে একজন পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে সুনামের সাথে একক অভিনয় করেন, যা তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম মঞ্চে একক অভিনেতা হিসাবে নাম লেখাতে সক্ষম হন। ১৯৭৯ সালে গঠিত বাংলাদেশের অন্যতম নাট্য সংগঠন বোধন থিয়েটার কুষ্টিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানেও তিনি এই থিয়েটারের সাথে সক্রিয় রয়েছেন। ১৯৮০ সালে গঠিত কুষ্টিয়ার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৮০ সালে গঠিত বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৮১ সালে গঠিত গ্রাম থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও খুলনা বিভাগীয় প্রধান ছিলেন এবং বর্তমানে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গুণী নাট্য সংগঠক আমিরুল ইসলাম অভিনয়ের পাশাপাশি মঞ্চ পরিকল্পনা, আলোক– পরিকল্পনা ও নাট্য নির্দেশনার কাজ করেন। তিনি স্টাইল বজায় রেখে অভিনয় করেন এবং অভিনয়ে আলাদা মাত্রা যোগ করেন। অভিনয়ের জন্য তিনি দেশ ছাড়িয়ে দেশের বাইরেও গিয়েছেন। এই গুণী নাট্য ব্যক্তিত্ব বকফুল কন্যা, শুরু করি ভূমির নামে, কোর্ট মার্শাল, মিছিল, চোর চোর, ঈঙ্গিত, ওরা কদম আলী, থেটার বাবু, কিংশুক যে মরুতে, আলো একটু আলো, ভাঙ্গা মেলা, কুয়াশার কান্না, সূর্য মহল, ময়ূর মহল, বেকার নিকেতন, বিশ পঞ্চাশ, বন্দী ছেলে, দুই ভাই, সুবচন নির্বাসনে, নাটক, রক্ত থাবা, ফিফটি ফিফটি, স্মৃতি চিহ্ন, ডাকাত, স্পার্টাকাস্, ক্ষুধা, ফেরা, চোর, ফাঁশ, খ্যাপা পাগলার প্যাচালসহ পঞ্চাশটির অধিক নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন এবং তিন শতাধিক নাটক মঞ্চায়নে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর নির্দেশিত নাটক সমূহ: ঈঙ্গিত, মিছিল, আলো একটু আলো, চোর চোর, থেটার বাবু, ওরা কদম আলী, খ্যাপা পাগলার প্যাচাল, গুপ্তধন। মঞ্চ পরিকল্পিত নাটক: কোর্ট মার্শাল, চোর চোর। এছাড়াও বোধন থিয়েটার আসার পূর্বে করা অধিকাংশ নাটকের মঞ্চ পরিকল্পক ছিলেন তিনি। পূর্বে যে সকল নাট্যদলে ছিলেন: গঙ্গা কপোতাক্ষ কৃষ্টি সংসদ, কুষ্টিয়া ও রঙ্গনা, ঢাকা। বর্তমান নাট্যদল: বোধন থিয়েটার কুষ্টিয়া। যে নাটকে যে চরিত্রে অভিনয় করে তৃপ্ত হয়েছেন: কিংশুক যে মরুতে(পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা), আলো একটু আলো(মেজ ভাই), চোর চোর(রাহাত), ওরা কদম আলী(সর্দার), ইঙ্গিত(হুজুর, ফরেস্ট অফিসার, শিক্ষক, সেনাপতি, মিছিল কোটাল), শুরু করি ভূমির নামে(প্রভু), কোর্ট মার্শাল (কর্ণেল রাব্বি)। তাঁর প্রিয় নাট্যকার: সেলিম আল দীন, এস.এম সোলায়মান, সাইমন জাকারিয়া, আসলাম আলী। তাঁর প্রিয় নাটক: আলো একটু আলো, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, শকুন্তলা, কেরামত মঙ্গল, কিত্তনখোলা, মিছিল, চোর চোর, শুরু করি ভূমির নামে, কোর্ট মার্শাল, বকফুল কন্যা। শুধু নাটক নয়, সংগীতর ক্ষেত্রেও তার সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল বিস্তৃত। হারিয়ে যাওয়া যাত্রাশিল্পকে পুনরুদ্ধারের জন্য তিনি ২০১৬ সাল থেকে প্রতিবছর নিয়মিত যাত্রা উৎসবের আয়োজন করে যাত্রাশিল্প এবং যাত্রাশিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর পঞ্চাশ বছরের অভিনয় জীবনে দেশে বিদেশে বিভিন্ন সংগঠন তাঁকে সংবর্ধিত করেছে। তিনি পঞ্চাশটির অধিক নাটকে প্রায় দুই শতাধিক মঞ্চায়নে অভিনয় করেছেন। এছাড়াও তিনি পাঁচটি চলচ্চিত্র এবং পঁয়ত্রিশটির অধিক টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন।
দেশের বাইরে ২০০৩ সালে আমেরিকায় আন্তর্জাতিক লোক উৎসবে লালনের দল প্রেরণ, ২০০৫ সালে আইসিসিআর এর আমন্ত্রণে ভারতের দিল্লিতে ইন্টারন্যাশনাল সুফি ফেস্টিভ্যালে একটি দলের নেতৃত্ব প্রদান, ভারতের ৫টি রাজ্যের বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণ করেন।
আশরাফুননাহার দিনুঃ আমিরুল ইসলামের সহধর্মিনী আশরাফুননাহার দিনু একাধারে একজন প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী, নৃত্য প্রশিক্ষক, মঞ্চ নাটকের কোরিওগ্রাফারসহ মিউজিসিয়ান, অভিনেত্রী। তাঁর একমাত্র কন্যা সবার পরিচিত আলভি। ২০০৭ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার আপ হয়ে বর্তমানে টেলিভিশন তারকাদের মধ্যে অন্যতম।
-মুহম্মদ রবীউল আলম