প্রধানমন্ত্রীর কাছে মৃত্যুর আগে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান কুষ্টিয়া সংগীত শিক্ষক বাবলু

kushtiatvkushtiatv
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  07:21 PM, 26 December 2023

নিজেস্ব প্রতিবেদকঃ প্রধানমন্ত্রীর কাছে অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত একজন মুক্তিযোদ্ধার পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিনীত আবেদন। আমি খোন্দকার মিজানুর রহমান বাবলু, কুষ্টিয়া জেলার স্থায়ী বাসিন্দা ও বিভিন্ন সরকারী স্কুলের সাবেক সংগীত শিক্ষক।
১৯৭১ সালে বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশ রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিলাম। কুষ্টিয়া জেলার প্রথম শহীদ কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের সাইন্সের ছাত্র রনী রহমানের বানানো পেট্রোল বোমা পাকিস্তানি বাহিনীর গাড়িতে নিক্ষেপের দলে আমিও ছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত রনী ভাই গুলিবিদ্ধ হন এবং শহিদ হন।সিনিয়র সাংবাদিক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব কুষ্টিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস (প্রথম খন্ড) বইয়ের ১৪৪ পৃষ্ঠায় থানাপাড়া ও কুঠিপাড়া এলাকার ছাত্রলীগের যে প্রতিরোধ টিমের তালিকা উপস্থাপন করেছেন সেখানে আমার নাম রয়েছে। ৩০ মার্চ কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে পাকসেনাদের ক্যাম্প আক্রমণ টিমে আমি ছিলাম। লে:ক: আবু ওসামান চৌধুরীর নির্দেশনায় ৩০ মার্চ কুষ্টিয়ার দামাল ছেলেদের কাছেই প্রথম পরাজিত হয় পাক সেনারা যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। এছাড়াও দৌলতপুরের ধর্মদা যুদ্ধে আমি অংশগ্রহণ করি। পরবর্তীতে আরও বেশি পাকসেনা পাঠিয়ে শহরের দখল নিলে আমরা অনেকেই প্রশিক্ষনের জন্য ভারতে গিয়ে পৌছাই। বয়স তখন ১৭ বছর। নদীয়া জেলার, করিমপুরের, জামশেরপুর ইউথ ক্যাম্পে রিক্রুট হলাম। প্রশিক্ষণ গ্রহণের সময় একাগ্রতা, নেতৃত্ব গুণ এবং পাশাপাশি সঙ্গীতে পারদর্শিতার কারণে প্রশিক্ষকদের প্রিয় পাত্র হয়ে উঠি। প্রশিক্ষকগণের চাহিদার প্রেক্ষিতে আমাকে তাদের সহযোগী হিসেবে রেখে দেওয়া হয়। আমি পরবর্তীতে অলিখিতভাবে প্রশিক্ষক হিসেবে, গায়ক হিসেবে, সংগঠক হিসেবে অনেক দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু অনেকবার আবেদন করেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছি। ১৯৭১ সালে ভারতের প্রশিক্ষণ সনদ রয়েছে আমার। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাময়িক সনদ রয়েছে (গিয়াসউদ্দীন বীরপ্রতীক স্বাক্ষরিত)। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা কমান্ড ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ উপজেলা কমান্ড প্রদত্ত সুপারিশকৃত সনদ রয়েছে। ২০০৮ সালে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট আবেদন করেছিলাম। সভায় আমার সাক্ষাৎকার নেওয়ার পরেও কোনো ফলাফল পাইনি। ২০১২ সালে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের “প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই ফরম” উপজেলা থেকে নিয়ে আবেদন করি, নং ৪৩; কোনো ফলাফল পাইনি। ২০১৩ সালে জামুকায় আবেদন করি (ডি জি ১০৩৩২), শুনানির তারিখ ২৯/০৫/২০১৩; কোনো ফলাফল পাইনি। ২০১৪ সালে অনলাইনে আবেদন করে শুনানি বিলম্বিত হওয়ায় ২০১৫ সালে হাইকোর্টে একটি রিট করি (নং ১১৭০৫/২০১৫)। সিদ্ধান্ত না দিয়ে যাচাই বাছাই কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেয় হাইকোর্ট, উপজেলায় ফিরে আসি কিন্তু তখন যাচাই বাছাই কমিটি না থাকায় ২০১৬ সালে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয়ের নিকট আবেদন করি, কোনো ফলাফল পাইনি। ২০১৯ সালে উপজেলাতে যাচাই বাছাই এর জন্য সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু বাতিলের তালিকায় নাম আসে আমার। সহযোদ্ধাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন সার্টিফিকেট তো আসল। বাদ পড়লে কীভাবে! আপিল করো, হয়ে যাবে। জামুকায় আপিল করলাম। ২০২০ সালে আপিলের শুনানির জন্য চিঠি আসে। নির্দিষ্ট দিনে জামুকায় গিয়ে অপেক্ষা করে জানতে পারি ঐদিন হবেনা। পরে জানানো হবে। আজও অপেক্ষায় আছি; কোনো ফলাফল পাইনি। বাংলাদেশ গ্যাজেটে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা অনুসারে “যে সমস্ত ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নাম অন্তর্ভূক্ত করেছেন তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন”। সবাই শুধু আশা দেয় কিন্তু প্রকৃত স্বীকৃতি আমি পাই না।কয়েকদিন আগে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার পার্থ প্রতিম শীল বলেন , আপনার বিষয়টি নির্বাচনের পরে আমরা বসে সমাধানের চেস্টা করবো। বর্তমানে আমি বৃদ্ধ ও অসহায়। কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছি। আমার প্রাণের নেতা শেখ মুজিব সারা জীবন দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। আপনি তাঁরই সুযোগ্য কন্যা। বিশ্বের দরবারেও আজ আপনি মানবতার জননী। আপনার ও আপনার পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। পরিশেষে আপনার কাছে আমার করজোড়ে মিনতি, আমার মতো অসহায় ব্যক্তিকে প্রাপ্য স্বীকৃতি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাবদ্ধ করে বাধিত করবেন। বিনীত খোন্দকার মিজানুর রহমান বাবলু কুষ্টিয়া সদর, কুষ্টিয়া। মোবাইল: ০১৩০৫০৫৯১৬৯

আপনার মতামত লিখুন :